বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত

মেহেরপুরে নির্মানাধীন ভবনের সিঁড়ি ধসের ঘটনায় কর্মকর্তাদের পরিদর্শন :: ঠিকাদার ধোঁয়া তুলশীপাতা, নির্মান শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি

By মেহেরপুর নিউজ

January 08, 2017

মেহেরপুর নিউজ,০৮ জানুয়ারি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নবিনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন ভবনের ২য় তলার সিঁড়ি ধসের ঘটনায় এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি দল ধসে পড়া ভবন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনে নিম্ম মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কংক্রিট এবং সিমেন্ট কম দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন পরিদর্শন দলটি। এদিকে এ ঘটনায় তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে নির্মান শ্রমিকদের প্রধান রফিকুল ইসলামকে বিবাদি করে গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে। রবিবার সকালে মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার, গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক নির্মানাধীন অবস্থায় ধসে পড়া ভবন পরিদর্শন করেন। পরে দুপুরে যশোর এলজিইডির তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী শফিউল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যর আরো একটি দল নির্মানাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন দলে অন্যদের মধ্যে যশোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিজন কুমার দাস, মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার ছিলেন। পরিদর্শন দলটি নির্মানাধীন ভবনের ধসে পড়া সিঁড়িসহ ভবনটি ঘুরে ফিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে ওই সিঁড়ি নির্মানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ধসে পড়া সিঁড়িটি পুরো ভেঙ্গে ফেলে সিডিউল মোতাবেক সামগ্রী দিয়ে পুনরায় সিঁড়ি নির্মানের নির্দেশ দেন এবং আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ধসে পড়া সিঁড়ির কংক্রিটের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে সিঁড়ি ধসে পড়ার পর থেকে ঠিকাদার পক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে যাননি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। পরিদর্শন দলটি রবিবার দুপুরে নির্মানাধীন ভবন দেখতে গেলে সেখানে স্থানীয়রা ঠিকাদার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন এবং পুরো ভবনটি নতুন করে নির্মানের দাবি জানান। তা না হলে এ আতঙ্কের মধ্যে তাদের সন্তানদের স্কুলে না পাঠানোর কথা জানান। এসময় স্থানীয়রা বলেন, ঠিকাদার প্রভাবশলী নেতা হওয়ায় কাজের মান নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস করেননি স্থানীয়রা। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে চাঁদাবাজির ভয় দেখিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হত। শিক্ষকরা কয়েকদফা নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মানের প্রতিবাদ করেলে তাদের সাথেও ঠিকাদার পক্ষের লোকজনের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের সভাপতি সুমন আলী বলেন, এলজিইডির উর্ধতন কর্মকর্তারা ধসে পড়া সিঁড়ির কংক্রিটের (মশলা) নমুনা নিয়ে গিছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা জানাবেন বলেছেন। তবে আমাদের দাবি, ভবনটি সিডিউল মোতাবেক নির্মান করা না হলে অভিভাবকদের মধ্যে থেকে আতঙ্ক কাটছে না। তাদের আতঙ্ক না কাটলে তারা ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাবে না। এলজিইডির গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক বলেন, ঘটনার দিন রাতেই নির্মানধীন ভবনের প্রধান নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ঠিকাদারের নামে না করে শ্রমিকের নামে কেন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল হক বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শ্রমিকের নামে জিডি করা হয়েছে। আইনগত ভাবে ঠিকাদার নামের জিডি বা মামলা করার কথা হলেও রাতারাতি প্রভাবশালী ওই ঠিকাদার বাঁচাতে শ্রমিকের নামে জিডি করায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান নির্মান শ্রমিক রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, জিডি বা থানায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলতে সেভাবেই কাজ করা হয়েছে। মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার বলেন, ভবনের ধসে পড়া সিঁড়িটি পুরো ভেঙ্গে নতুন করে নির্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভবনের অন্য অংশগুলো মানসম্মত আছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেন, প্রকৌশলীকে না জানিয়ে ঢালাই করায় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল ভবনের সিঁড়ি ধসে পড়ার ঘটনায় রফিকুল ইসলামনামের এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে উপজেলার এলজিইডি অফিস থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। জানা গেছে, পিইডিপি-৩ প্রকপ্লের আওতায় ৬৩লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দে গত বছরের মে মাস কাজ শুরু করে তামান্না ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক পাওয়ার অব এ্যাটর্নি গ্রহণ করেন। গত বছরের মে মাস থেকে কাজ শুরু হলেও ওই কাজটি দেখাশুনা করতেন এম এ খালেকের ব্যবসায়ি পার্টনার মোনায়েম হোসেন মুলাক। গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে নির্মানাধীন ২য় তলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য সাটারিংএর কাজ শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দুই সপ্তাহ পূর্বে ঢালাই করা সিড়ি ধসে যায়। এসময় মুক্তার আলী নামের এক শ্রমিকও আহত হয়। তখন বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন শেডে ক্লাস চলছিল। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধসে পড়ার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক পালাতে থাকে।