মেহেরপুর নিউজ,০৬ ফেব্রুয়ারি:
ভেঙে ফেলা হচ্ছে মেহেরপুরের গাংনীতে ভবন নির্মান শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়া সিঁড়ির সেই স্কুল ভবন। উপজেলার নবীনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের নির্মানকাজে ত্রুটি প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকারের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ওই ভবন ভাঙা শুরু হয়।
সোমবার সকালে মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক উপস্থিতিতে ঠিকাদারের শ্রমিকরা ভবন ভাঙা শুরু করেন। অনিয়ম করে ভবন নির্মান করার ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তরা করার প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী।
এদিকে ভবন ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় অভিভাবক, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা স্কুল চত্বরে জড়ো হন এবং পুরো ভবন ভেঙে ফেলার দাবি করেন। না হলে ওই স্কুলে তাদের সন্তানদের পাঠাবেন না বলে জানান।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, এই বিল্ডিং এর একটা অংশ থাকলেও আমরা নেব না। প্রয়োজনে আমাদের স্কুলের জমি ফাঁকা করে দেওয়া হক। আমরা দরকার হয় ওখানে চাষাবাদ করবো।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার শেলী বলেন, অনিয়ম করে বিল্ডিং বানানো হয়েছে। বিল্ডিং পুরাপুরি ভেঙে দিয়ে নতুন ভাবে করে দেয়ার দাবি করেন তিনি। নতুন করে করে না দিলে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চা দিবেন না বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, গত বছর এখানে ১২০ জন শিক্ষার্থী ছিল। নতুন ভনের সিড়ি ভেঙে যাওয়ার কারণে এবছর মাত্র ৭০ জন ভর্তি হয়েছে। দূর্বল এই ভবন পুরো ভেঙ্গে নতুন না করা হলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবে না বলে জানিয়েছেন তাকে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুমন আলী বলেন, অনিয়ম করে বিল্ডিং করা হয়েছে। লোক দেখানো ভাঙা হলে আমরা তা মানব না। সর্ম্পূনভাবে এটিকে ভেঙে ফেলে নতুন ভবনের দাবি করেন তিনি।
এলজিইডির গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক বলেন, নির্মান কাজে ত্রুটি প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গত বৃহস্পতিবার এক আদেশে এই ভবনের যতটুকু ক্রুটি আছে সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার বলেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ওই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, উপর থেকে ভাঙা হবে। যতটুকু ত্রুটি পাওয়া যাবে ততটুকু ভেঙ্গে ফেলা হবে। এমনকি যদি ভবনের নিচ পর্যন্ত ত্রুটি পাওয়া যায় সেটিও ভাঙা হবে।
আজিম উদ্দিন সরদার আরো বলেন, এ ধরণের অনিয়মের কারণে আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তামান্না ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে কালো তালিকা ভুক্ত করেছি। এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠানটি এলজিইডিসহ যে কোনো ধরণের উন্নয়ন মূলক কাজ করার এখতিয়ার হারাবেন।
জানা গেছে, পিইডিপি-৩ প্রকপ্লের আওতায় ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ৫শ টাকা বরাদ্দে গত বছরের মে মাস কাজ শুরু করে তামান্না ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের কুষ্টিয়ার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ওই ভবনের কাজ ভাগ করে নেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মোনায়ামে হোসেন মুলাক। কাজের প্রথম থেকে সিমেন্ট কম দেওয়া, দুর্বল ইট ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম করলেও ঠিকাদার ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননি। নির্মানের সময় স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক ও শিক্ষকরা এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে কয়েকজন শ্রমিক কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি তাদের কয়েকদিন পারিশ্রমিকও পরিশোধ করা হয়নি। শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের সাথে ঠিকাদার পক্ষের লোকজনের হাতাাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর ওই ভবনের ১ম তলার সিঁড়ি তড়িঘড়ি করে প্রকৌশলীদের অনুপস্থিতে ঢালাই করা হয় । তার ১৫ দিন পর গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে নির্মানাধীন ২য় তলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য সাটারিংএর কাজ শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে সিঁড়ি ধসে নিচে পড়ে যায়। ওই ঘটনায় এক নির্মান শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। ওই সময় বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন শেডের ভবনে ক্লাস চলছিল।
এনিয়ে গত ৮ জানুয়ারি কালের কন্ঠ’র ২য় পাতায় ‘স্কুল ভবন নির্মান শেষের আগেই ধসে পড়ল সিঁড়ি’ এবং ৯ জানুয়ারি একই পাতায় ‘ঠিকাদারের বদলে শ্রমিকের নামে জিডি’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হলে কতৃপক্ষের টনক নড়ে।